বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর অপরাধ কী ও তার কারণঃ
আজকের পরিবর্তন ও অস্থিতিশীল সমাজে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত ১৬ বছরের কম ছেলে মেয়েরা আইন বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। এদেরকে আইনের ভাষায় কিশোর অপরাধ বলে। যদিও বেশির ভাগ কিশোর অপরাধ ১৮/১৯-২১/২২ বছর পর্যন্ত চলে, তবুও ১০/১১ বছর বয়স হতেই এই অপরাধ প্রবণতা শুরু হয়। এই জাতীয় অপরাধ সামাজিক , মানসিক এবং নৈতিক বিকাশের পরাজয়।কিশোর অপরাধ ছেলেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সামাজিক কারণে মেয়েরা দলবদ্ধ হতে পারে না এবং সাহসের অভাবে তাদের মধ্যে আগ্রাসন ভাব জন্মাতে পারে না। তবে তাদের মধ্যে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, অথবা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া বেশি হতে দেখা গেছে। ছেলেদের মধ্যে মারামারি, চুরি, ভাঙচুর করা প্রভৃতি কার্যকলাপ বেশি হয় । সাধারণভাবে শহরের বস্তি এলাকাতে এবং ঘনবসতি পূর্ণ পরিবেশে, সংঘবদ্ধ কিশোর অপরাধ বেশি হয়। সিনেমা হলের পাশে বা বাজার, রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত এলাকায় অপরাধ বেশি হয় সঙ্গদোষ এবং দলের প্রভাবেও অনেক ছেলে কিশোর অপরাধে অনুপ্রাণিত হয়। গ্রাম্য পরিবেশে কিশোর অপরাধের প্রকোপ কম হয়।
পরিবারের ভাঙ্গন, অর্থনৈতিক সমস্যা দারিদ্র্য বেকারত্ব ঘনবসতি লেখাপড়া ও খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধার অভাব প্রভৃতি কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ। পরিবারের অশান্তিকর পরিবেশ, ববা-মা ও ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কলহ, মদ্যপান, উদাসীনতা এবং শিশুর প্রতি কঠোর শাসন নীতি বা একেবারে অবহেলা কিশোর অপরাধকে প্রভাবিত করে। পরিবারের পুরুষের শাসনের প্রতি এ ধরণের কিশোরেরা প্রবল বিদ্রোহ প্রদশন করে। সাধারণভাবে দেখা গেছে কিশোর অপরাধীদের বাবা-মা কঠোর প্রকৃতির হয়। ছেলে মেয়ের প্রতি স্নেহ-মমতা প্রদর্শনে বিরত থাকে এবং মারমুখো প্রকৃতির হয়। কখনও কখনও কিশোর অপরাধ বিত্তশালী পরিবারের ছেলেদের মধ্যে দেখা যায়।
বয়ঃসন্ধিকালে স্কুল পালানোর প্রবণতা দেখা যায় অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা অভাব এবং কখনও অতিরিক্ত অর্থলাভও স্কুল পালানোকে প্রভাবিত করে। নিন্মবিত্ত ও বস্তি এলাকারবসবাসকারীদের মধ্যে স্কুল পালানোর প্রবণতা বেশি।
চুরি, পকেটমার, জুয়া খেলা, মাদক গ্রহণ, বোমাবাজি, বিনা টিকেটে রেলভ্রমণ, ভাঙচুর নাশকতামূলক কাজ,নোংরা ছবি দেখা, ইভটিজিং, কখনও কখনও তারা খুনও করে। বর্তমান সময়ে দেখা গেছে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয় পরবর্তীতে জঙ্গি হামলা করে।
কিশোর অপরাধের কারণঃ
পরিবারের উপযুক্ত নেতৃত্বদানকারী এবং নির্ভরশীল বাবার প্রতিরূপের অভাবে ছেলেরা নিজেদের মধ্যে নৈতিক চেতনাবোধ গঠনের সুযোগ পায় না। ফলে এরা সহজেই লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যায় কাজে করে ফেলে। অন্যায় ও আইনবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার পরও এদের মধ্যে অনুশোচনা বা অন্যায়বোধ কম হয়, , ফলে তারা পুনরায় অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়।কিশোর অপরাধীদের মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে এদের মধ্যে হতাশা, দুশ্চিন্তা লেখাপড়ায় অসফলতা বেশি হয়। এরা নিজেদেরকে প্রত্যাখ্যান অবলেহিত মনে করে। এরা সমাজের রীতি-নীতিকে অমান্য করে। শিশুকাল থেকে এসব ছেলেরা সমস্যাবহুল হয়। এদের সমস্যাজনিত আচরণের জন্য শাস্তি প্রদান করা হয় উপেক্ষা করায় অবহেলা বা কঠোর শাসনে রাখা হয়। ফলে তাদের মধ্যে পূঞ্জীভূত হতাশা, হীনমন্যতা, ক্রোধ প্রভৃতি ঋণাত্বক মনোভাব বিদ্রোহ ও ধ্বংসের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
আমাদের মনে রাখতে হবে কিশোর অপরাধ একদিন বা হঠাৎ করে হয় না। বহুদিনের হতাশা, দুঃশ্চিন্তা ও আগ্রাসনের বশবর্তী হয়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদের অতৃপ্ত ইচ্ছাকে অন্যায় করার মাধ্যমে প্রকাশ করে। এ বয়সে তাদের অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে জেল বা হাজত বাস তাদের মনের উপর আরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই তাদের পূর্নবাসনে র মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।
Comments
Post a Comment